সোহাগ হাসান জয় সিরাজগঞ্জ থেকে-
সিরাজগঞ্জের বেলকুচি উপজেলায় সরকার দলীয় দ্বন্দ্বের কারনে সরাসরি কৃষকদের কাছ থেকে ন্যায্যমুল্যে ধান সংগ্রহ অভিযান বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। ধান সংগ্রহ কমিটির সভাপতি উপজেলা নির্বাহী অফিসার এই ধান সংগ্রহ বন্ধ রাখার নির্দেশ দেন। প্রায় দুই মাস আগে থেকে ধান ক্রয় অভিযান শুরম্ন হলেও শেষ দিন সোমবার ৩১ আগষ্ট পর্যন্ত্ম এক মুঠোও ধান সংগ্রহ করা হয়নি। অভিযোগ প্রকাশ, ধান ক্রয় অভিযানে শেষ দিনে স্থানীয় এমপি আব্দুল মজিদ মন্ডলের মদদপুষ্ট একটি সিন্ডিকেট রায়গঞ্জ উপজেলার এক চাতাল মালিকের কাছ থেকে ১৩০ মে.টন ধান গোপনে ক্রয় করে বেলকুচি খাদ্যগুদামে সরবরাহের জন্য নিয়ে আসা হয়। এতে স্থানীয় আওয়ামীলীগ কতিপয় নেতা বাঁধা দেন। এ নিয়ে চরম উত্তেজনা সৃষ্টি হওয়ায় সোমবার সন্ধা রাতে ধান সংগ্রহ কমিটির সভাপতি উপজেলা নির্বাহী অফিসার মোহাম্মদ সাইফুল হাসান এই ধান সংগ্রহ বন্ধ রাখার নির্দেশ দেন। পরে ধানবোঝাই ট্রাকগুলো খাদ্যগুদাম থেকে বের করে দেয়া হয়। মে মাস থেকে সরকারীভাবে স্থানীয় কৃষকদের কাছ থেকে ধান সংগ্রহ অভিযান শুরম্ন হয়। এবার সরকার কেজি প্রতি ধানের দাম ২২ টাকা নির্ধারণ করা হয়। বেলকুচি উপজেলার জন্য ১৬০ মে.টন ধান সংগ্রহ করার জন্য নির্ধারণ করা হয়। এ ধান সংগ্রহে কৃষকদের অবগতির জন্য প্রতিটি ইউনিয়নের হাট বাজারে ঢাক-ঢোল ও গণবিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করার কথা থাকলেও খাদ্য বিভাগ তা করেনি।এ জন্য ন্যায্যমুল্যে ধান সংগ্রহ বিষয়টি গোপনই থেকে যায়। বিধান রয়েছে খাদ্য গুদামে কৃষকরা ধান নিয়ে আসবে তা সরাসরি সংগ্রহ করতে হবে। কিন্তু নিয়ম বহির্ভুতভাবে স্থানীয় সিন্ডিকেট বিশেষ কৌশলে সংগ্রহ কমিটির সভাপতি ও উপজেলা নির্বাহী অফিসার বরাবর ৬০ জন কৃষককে দিয়ে আবেদন করানো হয়। এসব আবেদনকৃতদের কাছ থেকে ধান সংগ্রহের জন্য সংগ্রহ কমিটিকে ডিও লেটার দেন স্থানীয় এমপি। এ অবস্থায় ওই সিন্ডিকেটের সদস্যরা ৩০ আগষ্ট রাতে সিরাজগঞ্জের রায়গঞ্জ উপজেলার চাতাল মালিকের কাছ থেকে উলেস্নখিত মে.টন ধান ক্রয় করে খাদ্যগুদামে সরবরাহের জন্য নিয়ে আসা হয়। কিন্তু বিষয়টি জানাজানি হওয়ায় স্থানীয় আওয়ামীলীগ নেতা ও কৃষকরা এতে বাঁধ সাধে। এ নিয়ে সোমবার দিনভর ব্যপক সমালোচনার উপজেলা নির্বাহী অফিসার ধান সংগ্রহ থেকে খাদ্য পরিদর্শককে বিরত থাকার লিখিত ভাবে নির্দেশ দেন। এদিকে ধার ক্রয়ের শেষ দিনেও প্রকৃত কৃষকরা ন্যায্যমুল্যে ধান বিক্রি করতে না পারায় চরম বিপাকে পড়েছে। স্থানীয় কৃষক বেলস্নাল ও হালিমসহ অনেকে জানান, বাজারের ধানের দাম না থাকায় আমরা সরকারের নিকট ধান বিক্রি অপেÿায় ছিলাম। হঠাৎ ট্রাকে ট্রাকে গুদামে ধান আনায় আমরা হতভম্ব হয়ে পড়েছি। কর্মকর্তারা সিন্ডিকেট করে ধানগুলো নেয়ার পায়তারা করছে। এ সম্পর্কে বেলকুচি উপজেলা আওয়ামীলীগের সভাপতি আলহাজ্ব একে.এম. ইউসুফ জী খান জানান, বেলকুচির প্রকৃত কৃষকদের কাছ থেকে এই ধান ক্রয় না করে সংগ্রহ কমিটি সিন্ডিকেটের মাধ্যমে অন্য উপজেলা থেকে ধান সংগ্রহের চেষ্টা করা হয়। এ সিন্ডিকেটের সাথে স্থানীয় এমপি জড়িত রয়েছেন বলে তিনি মন্ত্মব্য করেন। আর এ কারণে সরকারে ভাবমুর্তি ÿুন্ন হচ্ছে। ক্রয় কমিটির উপদেস্টা ও উপজেলা চেয়ারম্যান মোহাম্মদ আলী জানান, উপজেলা নির্বাহী অফিসার সংগ্রহ কমিটির অন্যসদস্যরা অবৈধভাবে এমপির তালিকা সম্বলিত ডিও লেটার দিয়ে ধান সংগ্রহ করার চেষ্টা করেছেন। এ বিষয়ে তিনি লিখিত ভাবে জেলা প্রশাসককে অবগত করেছেন। এ বিষয়ে উপজেলা নির্বাহী অফিসার ও সংগ্রহ কমিটির সভাপতি মোহাম্মদ সাইফুল হাসান জানান, কোন সিন্ডিকেট নয়। রেজুলেশন করে ৬০জন কৃষকের আবেদনপত্র খাদ্য পরিদর্শককে দেয়া হয়েছে। সেই সাথে যাচাই-বাছাই করে প্রকৃত কৃষকদের কাছ থেকে ধান সংগ্রহের জন্যে নির্দেশ দেয়া হয়েছে। তিনি আরো জানান, আসলে ধান সংগ্রহ নিয়ে কিছুই হতো না। মুলত বেলকুচিতে সরকার দলীয় রাজনীতিতে এমপি আব্দুল মজিদ মন্ডল ও সাবেক মন্ত্রী আব্দুল লতিফ বিশ্বাসকে নিয়ে দুটি ধারা চলছে। এদের মধ্যে দ্বন্ধ থাকায় এ অবস্থার সৃষ্টি হয়েছে। দুজনের সমন্বয় থাকলে কিছুই হতো না। তাছাড়া যে ধানগুলো গুদামে আনা হয়েছে সেগুলো প্রকৃত কৃষকদের নয় বলে খাদ্য গুদামের পরিদর্শক ফারম্নক আলমগীর বিকেলে জানানোর পর সেগুলো সংগ্রহ থেকে বিরত রাখার নির্দেশ দেয়া হয়েছে। প্রকৃত কৃষক ধান না দেয়ায় এই ধান সংগ্রহ কার্যক্রম বন্ধ রাখার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। এ বিষয়ে এমপি আব্দুল মজিদ মন্ডল এসব অভিযোগ অস্বীকার করে জানান, প্রকৃত কৃষকের কাছ থেকে ধান সংগ্রহের জন্য উপজেলা নির্বাহী অফিসারকে নির্দেশ দেয়া হয়েছে। এদিকে সাবেক মন্ত্রী এবং জেলা আওয়ামীলীগের সভাপতি ও সিরাজগঞ্জ জেলা পরিষদ প্রসাশক আব্দুল লতিফ বিশ্বাস জানান, ধান সংগ্রহ নিয়ে খাদ্যমন্ত্রী শনিবার ফোন করে বলেছেন, প্রকৃত কৃষকদের কাজ থেকে যেন এই ধান সংগ্রহ করা হয়। সে বিষয়ে লÿ্য রাখবেন। পরে উপজেলা প্রশাসনকে বিষয়টি অবগত করা হলেও তারা কোন কর্ণপাত করেননি বলে তিনি উলেস্নখ করেন।